অনেকের হয়তো খেয়াল আছে, ২০১৮ সালে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পরীবাগ সাবস্টেশনে ভয়ংকর অগ্নিকান্ড ঘটে। তখন তদন্তের জন্য ডিপিডিসি এবং বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলীর মাধ্যমে একটি টেকনিক্যাল টিম গঠন করা হয়। টেকনিক্যাল টিমের সরেজমিন রিপোর্ট অনুসারে ট্রান্সফরমার বুশিং ই মূলত এই অগ্নিকান্ডের মূল কারণ।

পরীবাগ সাবস্টেশন
সাবস্টেশন



এখন অনেকেই হয়তো প্রশ্ন করবেন, বুশিং কি এবং কিভাবে বুশিং অগ্নিকান্ড তৈরি করতে পারে? তাই আমি মূল ব্যাখ্যায় যাওয়ার আগে বুশিং এর পরিচিতিটা আপনাদের নিকট তুলে ধরার চেষ্টা করব।

ট্রান্সফরমার বুশিং কি?

বুশিং মূলত এক ধরনের ফাঁপা ইন্সুলেটর যা ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইসে ব্যবহার করতে দেখা যায়। এটি ট্রান্সফরমারেও ব্যবহার হতে দেখা যায়। রাস্তা দিয়ে হেটে যাবার সময় ট্রান্সফরমারের মাথায় শিং এর মত যে অংশ দেখা যায় সেটাই মূলত বুশিং। 

ট্রান্সফরমার বুশিং
বুশিং


বুশিং এর কাজ কি?

  • এটির একটি স্পেশালিটি হল পরিবাহী তারকে কোন প্রকার বৈদ্যুতিক কন্ট্যাক্ট ছাড়াই কোন কন্ডাক্টর সারফেসে সহজে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। 
  • সাধারণত এটি পোর্সেলিনের সাহায্যে তৈরি করা হয়। 
  • অন্যান্য ইন্সুলেটিং ম্যাটেরিয়াল দিয়েও এটি তৈরি হতে পারে।

কেন এবং কোথায় ব্যবহার করা হয়?

  • সার্কিট ব্রেকারের লোড সার্কিটে পাওয়ার সংযোগ এই বুশিং এর মাধ্যমেই স্থাপিত হয়।
  • ট্রান্সফরমারের পাওয়ার সাপ্লাই সাইড এবং লোড সাইডের সাথে পাওয়ার লাইনের ফেজ লাইনের সেতুবন্ধন মূলত বুশিং এর মাধ্যমেই করা হয়ে থাকে।
  • যখন কোন পরিবাহী লাইনের মধ্য দিয়ে হাই/এক্সট্রা/আলট্রা লেবেলের ভোল্টেজে কারেন্ট প্রবাহিত হবে তখন তার চারপাশে বিশাল চৌম্বকক্ষেত্র সৃষ্টি হবে।
  • বিশাল ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড স্ট্রেসের কারণে পাওয়ার লাইনের কাছাকাছি কেউ থাকলে তার বিদ্যুতায়িত হওয়ার প্রকট সম্ভবনা থাকে। 
  • তাই পাওয়ার লাইনের ফেইজ লাইনগুলোকে ট্রান্সফর্মার বা সার্কিট ব্রেকারের বুশিং বা ইন্সুলেটিং বডির মধ্য দিয়ে প্রবেশ করানো হয় যাতে তার আশেপাশের এরিয়া এই বিশাল ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড থেকে রক্ষা পায়।

বুশিং কখন ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

এই প্রশ্নের ব্যাখ্যা বুঝতে হলে আমাদের ডাই-ইলেকট্রিক স্ট্রেন্থের সংজ্ঞাটা ক্লিয়ার হতে হবে।

ডাই-ইলেকট্রিক স্ট্রেন্থ

সকল মানুষের ধৈর্য্যের মাত্রা এক না। মানুষে মানুষে এই ধৈর্য্যের মাত্রার তারতম্য ঘটে। বুশিং এর মধ্যেও ইলেকট্রোম্যাগনেটিক চাপকে সহ্য করার একটি নির্দিষ্ট ক্যাপাসিটি থাকে। আর এই ক্যাপাসিটিকেই বলা হয় ডাই-ইলেকট্রিক স্ট্রেন্থ।

এই সহ্য ক্ষমতার বাইরে গেলেই বুশিং ক্ষতিগ্রস্ত বা শর্ট সার্কিট হয়ে যায়। বিভিন্ন সাবস্টেশনে বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনাগুলো অধিকাংশ সময় ট্রান্সফরমার বা সার্কিট ব্রেকারের বুশিং থেকেই হয়ে থাকে।

তাই সাবস্টেশনে প্রতি বছর কমিশনিং এর ব্যবস্থা থাকে। এই কমিশনিংকালে ট্রান্সফরমার, সার্কিট ব্রেকারে ব্যবহৃত বুশিং এর ইন্সুলেশন ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। অন্য একটি আর্টিকেলে ট্রান্সফরমারের ইন্সুলেশন টেস্ট নিয়ে সহজ ভাষায় আলোচনা করা হবে ইনশাল্লাহ।

আরো কিছু মজার পোস্ট