সাবস্টেশন ইলেকট্রিক্যাল জগতে খুবই সুপরিচিত শব্দ। আমরা অনেকেই সাবস্টেশন সম্পর্কে অবগত। হয়তো বই পুস্তকে পড়েছি কিংবা বাস্তবেও দেখে থাকব। আজ আমি একটু ভিন্নভাবে পুরো সাবস্টেশন ফ্যামিলির সদস্যদের আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব।

সাবস্টেশন কি?

সাবস্টেশন মূলত এমন একটি পরিসর যেখানে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক ডিভাইস ব্যবহার করে ভোল্টেজকে একটি নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে এনে তার সাথে সংযুক্ত গ্রীড সাবস্টেশন কিংবা গ্রাহক পর্যায়ে প্রেরণ করা হয়ে থাকে।

সাবস্টেশন
সাবস্টেশন


সাবস্টেশন এবং অফিস সিস্টেম

একটি অফিস সিস্টেমের কথাই ভাবুন। সেখানে বিভিন্ন লোক বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। কেউ অফিসের বসের হুকুম পালন করছে, আবার বস তার অধীনস্থ কর্মকর্তাদের কাজ তদারকি বা নিয়ন্ত্রণ করছে। কেউ অফিসের আর্থিক হিসেব নিকেশের কাজ করছে। আবার কেউ আই সি টি ডিপার্টমেন্ট সামলাচ্ছে। আবার কোন অফিসের নিরাপত্তা প্রদান করছেন নৈশ প্রহরী। এবার চলুন এই অফিস সিস্টেমের উপমাটির সাহায্যে সাবস্টেশন সিস্টেমকে তুলনা করব। শুরু করা যাক।

প্রথমে বলা হয়েছে অফিসে একজন বস থাকে যিনি অফিসের মূল চালিকাশক্তি। তেমনিভাবে সাবস্টেশনের মূল চালিকাশক্তি হল ট্রান্সফরমার। এই ট্রান্সফরমার ভোল্টেজকে কমিয়ে সুনিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে নিয়ে আসে। সাধারণত গ্রীড এবং ডিস্ট্রিবিউশন সাবস্টেশনে স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হয়। গ্রীড উপকেন্দ্রে ২৩০/১৩২, ১৩২/৩৩, ৪০০/২৩০, ৪০০/১৩২ এবং ডিস্ট্রিবিউশন সাবস্টেশনে ৩৩/১১ কেভি ট্রান্সফরমার ব্যবহৃত হয়।

তারপর ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে কমিয়ে আনা ভোল্টেজকে পরিমাপ করতে ব্যবহার করা হয় পটেনশিয়াল ট্রান্সফরমার। আর এই ভোল্টেজের দরুণ প্রবাহিত উচ্চমাপের কারেন্ট পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয় কারেন্ট ট্রান্সফরমার। এই কারেন্ট ট্রান্সফরমার এবং পটেনশিয়াল ট্রান্সফরমারকে আপনি কার্যালয়ের ঐ ব্যক্তিদের সাথে তুলনা করতে পারেন যারা অফিসের বিভিন্ন হিসেব নিকাশের কাজে ব্যস্ত থাকেন।

অত:পর বসের যেসব অধীনস্থ কর্মকর্তা হুকুম পালন করছে তাদের সাবস্টেশনের বিভিন্ন সুইচিং ডিভাইসের সাথে তুলনা করা যায় যেমন রিলে, আইসোলেটর।

এরপর আসা যাক নৈশ প্রহরীর কথায়। অফিসে একজন নৈশ প্রহরী থাকেন যিনি রাত জেগে অফিস পাহারা দিয়ে থাকেন। সাবস্টেশনেও একজন নৈশ প্রহরী থাকেন যার নাম সার্কিট ব্রেকার। সাবস্টেশনের কোন প্রকার ফল্ট হলেই সার্কিট ব্রেকার ট্রিপ করে সাবস্টেশনকে বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা করে। গ্রীড সাবস্টেশনে SF6 সার্কিট ব্রেকার এবং ডিস্ট্রিবিউশন সাবস্টেশনে ভ্যাকুয়াম সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা হয়।

আবার অফিসের বস চাইলে নিরাপত্তার জন্য নিজের সাথে বডি গার্ড রাখতেই পারেন। এক্ষেত্রে এই বডি গার্ড হল ট্রান্সফরমারের লাইটনিং এরেস্টার। যা বজ্রপাত থেকে ট্রান্সফরমারকে সুরক্ষা দেয়।

তারপর আইসিটি বিভাগে নিয়োজিত কর্মীদের আপনি সাবস্টেশনের পাওয়ার লাইন ক্যারিয়ার/SCADA সিস্টেমের সাথে তুলনা করতে পারেন।

পাওয়ার লাইন ক্যারিয়ার

বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য এমন একটি লাইন ব্যবহার করা হয় যেখানে ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল (50 Hz) এবং কমিউনিকেশন সিগন্যাল (400Hz) একত্রে পরিভ্রমণ করে।

এখন প্রশ্ন আসবে যে দুটি সিগন্যাল ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল (50 Hz) এবং কমিউনিকেশন সিগন্যাল (400Hz) কিভাবে নিরবচ্ছিন্নভাবে সঞ্চালিত হবে?

এই দুই ধরনের সিগন্যাল পরিভ্রমণে সমস্যা হবেনা। কারণ একটি নির্দিষ্ট সময় পর কমিউনিকেশন সিগন্যালকে ওয়েব ট্রেপ দিয়ে পৃথক করে নেয়া হয়। যেমনটি ছাকনি দিয়ে জল এবং বালিকে পৃথক করা হয়।

পাবলিক টেলিফোন নেটওয়ার্ক না ব্যবহার করে এটা কেন?
এটা বুঝতে হলে আগে ব্যান্ডউইথ এর ধারণা ক্লিয়ার হতে হবে। ব্যান্ডউইথ হল একটা রেডিও / ফাইবার চ্যানেলে প্রতি সময়ে কি পরিমাণ বাইনারি ডাটা চলাচল করতে পারে। এক কথায় একে ডাটা স্পীড বলা যায়। উদাহরণ হিসেবে একটা রাস্তায় গাড়ির ট্রাফিককে বলা যায় মানে কি পরিমাণ গাড়ি নির্দিষ্ট সময়ে যাতায়াত করছে ।
এখন রাস্তার মধ্যে যদি গাড়ি বেশি হয়ে যায় তখন জ্যাম বাজবে। তেমনিভাবে পাবলিক টেলিফোন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করলে তাদের ব্যান্ডউইথ কম হবে। তাই জরুরি মুহূর্তে কল কেটে যেতে পারে। ট্রান্সমিশন এ অনেক সময় লাগতে পারে।

অপটিক্যাল ফাইবারের পরিবর্তে এটা ব্যবহার হবে কেন?

হ্যা এটা অনেক পুরানো প্রযুক্তি। বর্তমানে অপটিক্যাল ফাইবারের সাহায্যে SCADA (supervisory control & data acquisition system) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।

চলুন তাহলে সাবস্টেশন সেট আপের জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইসগুলোর তালিকা তৈরি করা যাক।

  • ট্রান্সফরমার
  • পটেনশিয়াল ট্রান্সফরমার
  • কারেন্ট ট্রান্সফরমার
  • রিলে
  • আইসোলেটর
  • সার্কিট ব্রেকার
  • লাইটনিং এরেস্টার