পাওয়ার ফ্যাক্টর ভাইয়ার সাথে আমাদের সকলেরই পরিচিতি আছে। এমন লোক খুঁজে পাওয়া অসম্ভব যে পাওয়ার ফ্যাক্টরের সংজ্ঞা জানেনা। আজ পাওয়ার ফ্যাক্টর নিয়ে ভাইবা বোর্ডের একটি কমন প্রশ্ন আলোচনা করব। সেটি হল, ''পাওয়ার ফ্যাক্টর কিভাবে বিদ্যুৎ বিলকে প্রভাবিত করে?"। আজকে এই প্রশ্নটি গাণিতিক ব্যাখা সুন্দরভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।

পাওয়ার ফ্যাক্টর
বিদ্যুৎ বিল


যদিও আমরা সবাই পাওয়ার ফ্যাক্টরের সংজ্ঞা জানি তারপরেও ভালভাবে উপলব্ধি করার জন্য সংজ্ঞাটি আরেকটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। 

পাওয়ার ফ্যাক্টর কি?

পাওয়ার ফ্যাক্টর হল ভোল্টেজ এবং কারেন্টের মধ্যবর্তী ফেজ এংগেলের কোসাইন মান। 

Power Factor = cos(θv-θi)

শিল্প-কারখানায় বেশিরভাগ লোড ইন্ডাক্টিভ লোড। আর আমরা জানি, ইন্ডাক্টরের ক্ষেত্রে কারেন্ট ভোল্টেজের সাথে ল্যাগিং কন্ডিশনে থাকে। সহজ ভাষায় দূরে সরে যায়। ফলশ্রুতিতে ভোল্টেজ এবং কারেন্টের মধ্যে ফেজ এঙ্গেল বেড়ে যায়। আর ফেজ এঙ্গেল বেড়ে গেলে এই কোসাইন মান তথা পাওয়ার ফ্যাক্টর কমে যাবে। 

পাওয়ার ফ্যাক্টর কমে গেলে কোম্পানিকে বাড়তি বিদ্যুৎ বিলের হিসেব পোহাতে হয়। সেই সাথে "পেনাল্টি চার্জ" ত আছেই। 

কিভাবে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল পোহাতে হবে সেই গাণিতিক হিসেবে পরে আসা যাক। তার আগে প্যানাল্টি চার্জ টার্মটির সাথে পরিচিত হওয়া যাক। 

পেনাল্টি চার্জ কি?

কোন কোম্পানি যদি আদর্শ পাওয়ার ফ্যাক্টরের মান (সাধারণত 0.98) বজায় রাখতে না পারে তাহলে সংশ্লিষ্ট পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানিকে তাদের জরিমানা দিতে হয়। এই জরিমানাকেই বলা হয় পেনাল্টি চার্জ। এবার তাইলে ভাবুন একটি ইন্ডাস্ট্রির জন্য পাওয়ার ফ্যাক্টর ইউনিটিতে রাখাটা কতটা জরুরি। 


এবার আমরা গাণিতিকভাবে বুঝব কিভাবে পাওয়ার ফ্যাক্টর বিদ্যুৎ বিলকে প্রভাবিত করে? 

এসি সিস্টেমে তড়িৎক্ষমতা (P), বিভব (V) এবং তড়িৎ প্রবাহ (I) এর সাথে নিম্নোক্তভাবে সম্পর্কিত

P=V×I×cosθ.......(1)

এখানে θ হল এ ফেজর ডোমেইন এ বিভব ও তড়িৎ প্রবাহ নির্দেশকারী ভেক্টরের মধ্যবর্তী কোণ। 

(ডিসি সিস্টেমে θ=0 তাই P=V×IP=V×I)। V×I রাশিটিকে Apparent power বা kVA রেটিং বলা হয় যাকে S দ্বারা প্রকাশ করা হয়। সাধারণত যন্ত্রের এপারেন্ট পাওয়ার পরিমাপ করা হয় এই kVA রেটিং দ্বারা।

সারাংশ হল, V×I=S এবং cosθ=P.F

এবার কোনো একটি সিস্টেমের পাওয়ার ফ্যাক্টর যদি কম হয়, তবে ঠিক একই পরিমাণ ক্ষমতা (P) পেতে হলে আপনাকে বেশী kVA রেটিং এর যন্ত্রের প্রয়োজন হবে। কারণ, (১) নং সমীকরণ বলে যে,

S=P/P.F

যে যন্ত্রের kVA রেটিং বেশী, সেটি বেশি ব্যয়বহুল। অর্থাৎ খরচ বেড়ে যাবে।

আর যদি আপনি একই যন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন (অর্থাৎ S এবার fixed) তাহলে নিম্ন পাওয়ার ফ্যাক্টরের কারণে আপনার Active power বা কার্যকর ক্ষমতা (P) কমে যাবে। কারণ,

P=S×P.F

আপনার বাসায় পাওয়ার ফ্যাক্টর এর মান বেশি কমে গেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান জরিমানা করতে পারে। কারণ নিম্ন মানের পাওয়ার ফ্যাক্টরের ক্ষমতা সরবরাহ করলে সরবরাহ লাইনের তড়িৎ প্রবাহ বেড়ে যায়। যার প্রভাব আপনার কনজিউমড কিলোওয়াট-ঘন্টার বা ব্যবহৃত এনার্জির উপর পড়বে। 

কিভাবে?

১নং সমীকরণে ফিরে আসি। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আপনার বাসায় সর্বদা একটি নির্দিষ্ট ভোল্টেজে বিদ্যুৎ দিয়ে থাকে। আমাদের উপমহাদেশের জন্য এর মান ২২০/২৩০ ভোল্ট। আমাদের ব্যবহার্য যন্ত্রপাতিগুলো এই বিভবের জন্য উপযোগী করেই প্রস্তুত করা। তাই V সর্বদা স্থির রাখতে হবে। আপনি যদি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্ষমতা (P) নিয়ে থাকেন, তবে পাওয়ার ফ্যাক্টর কম হলে তড়িৎপ্রবাহের মান বেড়ে যাবে।

P=VxI×P.F

তাই পাওয়ার ফ্যাক্টরের ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়াটা খুব জরুরি। বিশেষ করে ইন্ড্রাস্টিতে পাওয়ার ফ্যাক্টর নিয়ে মাথা ব্যথা হওয়াটা জরুরি। তার জন্য পিএফআই প্যানেল সেট আপ করার সময় খুব সতর্ক থাকতে হবে। অন্যদিন আপনাদের সাথে পিএফআই প্যানেল ডিজাইন নিয়ে আলাপ হবে। 


আরো কিছু পোস্ট

 

https://eeeocean.blogspot.com/2021/01/vcb-sf6.html

https://eeeocean.blogspot.com/2021/01/blog-post_20.html