রাত জেগে পড়াশোনা করাটা কামালের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সবাই যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন কামাল তখন পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকে। বার্ষিক পরীক্ষা সন্নিকটে। তাই আজও মধ্যরাতে সে পড়াশোনা করতে লাগল। বাইরে মুষুলধারায় বৃষ্টিপাত এবং সেই সাথে বজ্রপাত হচ্ছে। কামাল লক্ষ্য করল বিদ্যুৎ হুট করে চলে গিয়ে কিছু সময়ের মধ্যে আবার ফিরে এল। সে বিজ্ঞানের ছাত্র। তাই তার কৌতুহলী মনে প্রশ্ন জাগল। ইলেকট্রিসিটি এই অল্প সময়ের জন্য গেলেও কেন আবার এলেও কেন? এ সময়ের ব্যবধানে কি ঘটল?

ট্রান্সমিশন লাইন
ট্রান্সমিশন লাইন



মূলত ডিস্ট্রিবিউশন লাইনে ট্রানজিয়েন্ট ফল্ট দেখা দিলে এমনটি হতে পারে। এখন নিশ্চয়ই পাঠকদের মনে উঁকি দিচ্ছে, ট্রানজিয়েন্ট ফল্ট জিনিসটা কি?

ট্রানজিয়েন্ট ফল্ট কি?

  • পাওয়ার সিস্টেমে যেসমস্ত ত্রুটি খুব অল্প সময়ের জন্য সংঘটিত হয় সেসমস্ত ফল্টকে বলা হয় ট্রানজিয়েন্ট ফল্ট।
  •  সাধারণত বজ্রপাত, পাখি, গাছের শাখা-প্রশাখা ইত্যাদির মাধ্যমে সাময়িকভাবে লাইন পতন কয়েক মুহূর্ত পরে আপনা-আপনি সেরে যায়।
  • কেননা, ট্রানজিয়েন্ট টাইপের ফল্টগুলো খুব তাড়াতাড়ি দূরীভূত হয়ে যায়। 
  • এক্ষেত্রে সাধারণ সার্কিট ব্রেকারে ত্রুটি দেখা দেয়া মাত্রই ট্রিপ করে যায় এবং পরবর্তী মুহূর্তে ত্রুটি আপনাআপনি সেরে গেলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনঃসংযোগ হয় না এবং এক্ষেত্রে পুনঃসংযোগের জন্য ব্যক্তিবিশেষের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়। 
  • উল্লেখিত অসুবিধা দূরীকরনের জন্য অটো-রিক্লোজার ব্যবহারের মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহের নিশ্চয়তা বিধান করা হয়। এতে সার্কিটের ডাই-ইলেকট্রিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।

অটো-রিক্লোজার এবং প্রত্যুৎপন্নমতি ব্যক্তি

  • প্রত্যুৎপন্নমতি শব্দের অর্থ হল উপস্থিত বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ব্যক্তি। 
  • অটো রিক্লোজার উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তির মতই যারা অল্প সময়ের মধ্যেই কোন সমস্যার সমাধান খুব সহজেই করে ফেলতে পারে।
  • কিন্তু ব্যক্তিটি যদি বার বার চেষ্টার পরেও সমস্যার সমাধান করতে না পারে তাহলে এক পর্যায়ে হাল ছেড়ে দিবে। কারণ প্রত্যেকেরই ধৈর্যের একটি সীমা থাকে।
  • তেমনিভাবে অটো রিক্লোজার ত্রুটি দেখা দিলে কিছু সময়ের ব্যবধানে (সাধারনত 0.3 সেকেন্ড) লাইনকে বিচ্ছিন্ন এবং পুনঃসংযোগ করতে পারে।
  • পর পর তিনবার এ প্রচেষ্টা চালানোর পরও ত্রুটি স্থায়ী হলে এটি লাইনকে আর পুনঃসংযোগ করে না যেমনটি উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিটি হাল ছেড়ে দিয়েছিল।
  • তখন ধারনা করা হয় বড় ধরনের ত্রুটি দেখা দিয়েছে এবং সেক্ষেত্রে ত্রুটি নির্ধারন করে মেরামতের প্রয়োজন।
  • এমতাবস্থায় ব্যক্তিবিশেষের উপস্থিতির মাধ্যমে ত্রুটি সেরে সার্কিট ব্রেকার চালু করতে হয়। এখানে উল্লেখ্য যে এই প্রসেসে সময় এত কম লাগে যে, তা সাধারন গ্রাহকদের দৃষ্টিগোচর হয় না। 
  • প্রধানত পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহ বা এল. টি লাইনে ইহা বেশি ব্যবহৃত হয়। সাধারণত দুই ধরনের রিক্লোজিং ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যথাঃ সিঙ্গেল ফেজ অটো-রিক্লোজিং এবং থ্রি-ফেজ অটো-রিক্লোজিং। 

অটো রিক্লোজার

অটো রিক্লোজার


অটোরিক্লোজার, সার্কিট ব্রেকার এবং আইসোলেটরের মধ্যে পার্থক্য

  • অটো-রিক্লোজার, সার্কিট ব্রেকার এবং আইসোলেটর তিনটি ডিভাইসই সুইচগিয়ার প্রটেকশন সিস্টেমের অন্যতম অংশ।
  • কিন্তু তাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। সবগুলোর ইফিসিয়ান্সি এক না।
  • প্রথমত আইসোলেটর অফ লোডে এবং অটো-রিক্লোজার এবং সার্কিট ব্রেকার অন লোডে কাজ করে।
  • আইসোলেটর সাবস্টেশন অপারেটরের মাধ্যমে পরিচালিত।
  • পক্ষান্তরে সার্কিট ব্রেকার এবং অতো রিক্লোজার অটোমেটিকভাবে পরিচালিত।
  • ধরুন সিস্টেমে কোন ফল্ট হয়েছে। এবার রিক্লোজার সার্কিটকে ওপেন করে দিলো এবং কিছু সময় পর আবার ক্লোজ করে দিলো।
  • কিন্তু এক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকার হলে সে আবার সার্কিটকে ওপেন করে দিলেও পুনরায় ক্লোজ করতে পারবেনা।
  • এটা সার্কিট ব্রেকার থেকে বহুগুণে উত্তম। কারণ এর মাধ্যমে অত্যাধুনিক উপায়ে অটোমেটিকভাবে সিস্টেম এর ফল্ট (light arresting, Surge fault) ডিটেক্ট করা যায়। যেটা সার্কিট ব্রেকার এ সম্ভব নয়।


অন্যান্য আর্টিকেল